সিলেট রিসোর্ট কান্ডে দেশের আইন লঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে সিলেট প্রতিদিন সিলেট প্রতিদিন প্রকাশিত: ৮:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫ সত্যজিৎ দাস: সিলেটের রিসোর্টে তরুণ-তরুণীদের আটকে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশের আইন লঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে আট তরুণ-তরুণীকে আটকে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে আইন ও মানবাধিকারের গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় জনগণের হাতে এমন নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি দেশের প্রচলিত আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ রিজেন্ট পার্ক অ্যান্ড রিসোর্টে হামলা চালায়। তারা রিসোর্টে ভাঙচুর, লুটপাট এবং আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় রিসোর্টে থাকা ১২ তরুণ-তরুণীকে আটক করা হয়। পরে কাজী ডেকে আট জনের বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। কাজী আব্দুল বারীর দাবি অনুযায়ী,’স্থানীয় জনতার অনুরোধে এবং অভিভাবকদের সম্মতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই দাবির সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্যের সঙ্গতি পাওয়া যায়নি‘। আইন বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে,এই ঘটনার মাধ্যমে একাধিক আইন লঙ্ঘন হয়েছে,যা নিম্নরূপঃ- ১) স্বাধীন চলাচল ও ব্যক্তিগত অধিকারের লঙ্ঘনঃ– সংবিধানের ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী,বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীন চলাচলের অধিকার রয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে আটকে রাখা সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন। ২) জোরপূর্বক বিয়েঃ– পারিবারিক আইন অনুযায়ী,বিয়ে হতে হবে উভয়ের সম্মতি ও স্বতঃস্ফূর্ততায়। কোনো রকম জোরপূর্বক বা বাধ্যতামূলক বিয়ে অসাংবিধানিক ও অবৈধ। ৩) শান্তি ভঙ্গ ও ভাঙচুরঃ– ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে কোনো ধরনের সম্পত্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট দণ্ডনীয় অপরাধ। ৪) পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্নঃ– পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও বিয়ে সম্পন্ন হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আইন অনুযায়ী,পুলিশকে অভিযুক্তদের আটক করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদালতে সোপর্দ করা উচিত ছিল। সিলেট মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার বলেন,“কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বেআইনি কিছু করলে তার বিচার আইনের আওতায় হবে। স্থানীয় জনগণের হাতে আইন তুলে নেওয়া স্পষ্টভাবে বেআইনি ও অমানবিক।” তিনি আরও বলেন,“পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এর মাধ্যমে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।” চাঁদাবাজির অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রভাবঃ– রিসোর্টের মালিক হেলাল আহমদ অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করছিল। দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে এই অভিযোগ রাজনৈতিক নেতা তাজরুল ইসলাম অস্বীকার করেছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন,এই ঘটনায় নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া উচিতঃ- ১) তদন্ত কমিশন গঠনঃ– একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা উচিত। ২) আইনগত ব্যবস্থাঃ– হামলা,আটকে রাখা এবং জোরপূর্বক বিয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ৩) মানবাধিকার সংস্থার ভূমিকাঃ– জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এই ঘটনার ওপর নজরদারি করা উচিত। এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,বরং এটি একটি বড় সামাজিক ও আইনি সমস্যার প্রতিচ্ছবি। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। সিলেট প্রতিদিন/এসডি. সিলেট প্রতিদিনসত্যের খোঁজে প্রতিদিন Share this post: Facebook Twitter LinkedIn Pinterest WhatsApp আইন-আদালত বিষয়: News updateSylhetSylhet Pratidinআলোচিত সংবাদদক্ষিণ সুরমামানবাধিকার লঙ্ঘনসিলেট