এভাবে কী জীবন চলে ?

প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪

রাজেশ কুমার কানু:

আমরা মানুষ। আর চাহিদা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ। বাঁচতে হলে আমাদের অনেক কিছুরই প্রয়োজন। সেহেতু আমাদের চাহিদা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা কতটা? এই হিসেব সম্ভবত আজ পর্যন্ত করা হয়নি। মহাবিশ্বের মতোই অসীম আমাদের চাহিদা; যার কোনো শেষ নেই।

আসুন কিছু দৃশ্যপট ভাবা যাক:
দৃশ্যপট- ১ঃ-
দুজন ছেলে-মেয়ে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। ছেলেটা ছোট্ট একটা চাকরি করে। বিয়ের আগে মেয়ের শর্ত ছিল- তার বিলাসী জীবনের দরকার নেই। ছোট্ট একটা সংসার; একটু অভাব থাকলে থাকবে। কিন্তু ভালোবাসা আর বিশ্বস্ততার যেন কমতি কখনো না হয়। ছেলেটা শর্ত মেনেই দুজন মিলে নতুন জীবন শুরু করলো। সব ভালোই চলছে। কিন্তু কিছুদিন পরে থেকেই শুরু হলো স্ত্রীর অভিযোগ। এটা কোনো জীবন হলো? এভাবে কী বাঁচা যায়? এভাবে কী জীবন চলে??? ইত্যাদি ইত্যাদি। ছেলেটি নির্বিকার। ছেলেটি ভাবছে- আমি তো শর্তের কোনো ব্যাতিক্রম করিনি। তাকে সাধ্যের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি আর সর্বদা বিশ্বস্ত থেকেছি। তাহলে এসব অভিযোগ কেন?

অন্য এক দম্পতি। স্বামী বড় ব্যাবসায়ী। স্ত্রীকে কোনো অভাবে রাখে না। স্ত্রী তার চাওয়ার চাইতে বেশি পেয়েছে। দামী শাড়ী,গা ভর্তি গহনা- এমন সব দিয়েছে।

কিন্তু স্ত্রীর অভিযোগঃ স্বামী তাকে সময় দেয় না। এত বিলাসিতা দিয়ে কী হবে যদি স্বামীর সুখ না পাওয়া যায়?

স্বামী ভাবছে- স্ত্রীর কোনো অভাব রাখেনি তবুও অভিযোগ???

দৃশ্যপটঃ-২
একটা রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকে বসে খাবার খাচ্ছে। পাশাপাশি দুইটি টেবিলে দুই দম্পতি। প্রথম দম্পতি নিম্ন মধ্যবিত্ত আর দ্বিতীয় দম্পতি উচ্চবিত্ত। নিম্ন মধ্যবিত্ত স্বামী মেনু কার্ড নিয়ে অনেকক্ষণ দেখে স্ত্রীকে বলল- হালকা কিছুর অর্ডার দেই। মাস তো শেষের দিকে…
স্ত্রী মুখ ভার করে বলল- প্রতি সপ্তাহেই বেড়াতে নিয়ে এসে তোমার সেই একই কথা- হালকা কিছু অর্ডার করি। এভাবে কী জীবন চলে?
স্বামী ভাবছে- প্রতি সপ্তাহে সে ছুটির দিনে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যায়। স্ত্রীকে যথেষ্ট সময় দেয়। তবুও এমন অভিযোগ!

ওপাশে উচ্চবিত্ত স্বামী স্ত্রীর দিকে মেনু কার্ড দিয়ে বলল- যা খেতে ইচ্ছে হয় অর্ডার কর। স্ত্রী সানন্দে নিজের পছন্দের খাবার অর্ডার করল। খাবার মাঝে স্বামীর একটা কল এলো। স্বামী বলল- দ্রুত শেষ কর। আমাকে এখনি উঠতে হবে।

স্ত্রী বলল- আজ ছয় মাস পরে নিয়ে একটু বের হলে তবুও তোমার কিছুটা সময় হলো না। এভাবে কী জীবন চলে?

স্বামী ভাবছে– স্ত্রীর সুখের জন্য দিনরাত কাজ করে স্ত্রীকে এত সুখে রেখেছে তবুও অভিযোগ!

দৃশ্যপট ৩ঃ-
স্বামী কাজ শেষ করে সন্ধ্যার পরে স্ত্রীর পছন্দের লাল গোলাপ নিয়ে বাসায় ফিরল। স্ত্রী দরজা খুলতেই স্বামী স্ত্রীকে চোখ বন্ধ করতে বলল। স্ত্রী চোখ বন্ধ করতেই স্বামী গোলাপ বের করে স্ত্রীর খোপায় গুঁজে দিয়ে চোখ খুলতে বলল। স্ত্রী গোলাপ পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল। শোন না- পাশের বাসার বৌদিকে আজ উনার স্বামী একটা বিদেশি নেকলেস উপহার দিয়েছে,ভীষণ সুন্দর!

স্বামী নির্বিকার ভাবে স্ত্রীর খোপার গোলাপের দিকে তাকিয়ে…

পাশের বাসার সেই বৌদি সোনার নেকলেস পেয়ে তো খুব খুশি। তিনি রাতের বেলায় স্বামীকে ফোন থেকে একটা ছবি বের করে বলল- দেখো আমার ছোট বোনের জামাই ওর জন্যে বিদেশ থেকে একটা হীরার নেকলেস উপহার পাঠিয়েছে। দেখো দেখো কত্ত সুন্দর!!!
স্বামী নির্বিকারভাবে স্ত্রীর গলায় সদ্য উপহার দেওয়া নেকলেসের দিকে তাকিয়ে…

এদিকে হীরার নেকলেস পাওয়া বোন তার দিদিকে পরদিন ফোন দিয়ে বলছে- দিদি, এসব হীরার নেকলেস দিয়ে কী করব? তোর সাথে তো জামাইবাবু সব সময় থাকে। আর আমার স্বামী তিন চার বছর পর পর আসে সেটাও এক মাসের জন্য। স্বামীর সংস্পর্শ পাবার জন্য প্রতি রাতে ছটফট করি… এভাবে কী জীবন চলে ?

এমন হাজারো দৃশ্যপটের অবতারণা করা সম্ভব। যেখানে আমাদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট নই। আবার অন্যদের অনেক কিছু দেখে আমরা ভাবি তারা কত সুখী। অথচ তারাও অন্যদের দেখে নিজের অভাব বোধ করে। প্রত্যেকেই তার অবস্থানে তাহলে অসুখী। কেউ কী তাহলে সুখী নয়?

হুম,এতকিছুর মাঝেও কিছু মানুষ সুখী। আর তারা হলো- নিজের যা আছে,যেটুকু আছে,যে অবস্থায় আছে তাতেই যারা সন্তুষ্ট তারাই সুখী। এভাবেই সুখী হতে হয়। নিজের যা আছে সেখানেই সুখ খুঁজে নিতে হবে। আর এর নাম জীবন। এভাবেই বাঁচতে হয়। যা নেই তা নিয়ে আক্ষেপ করার কিছু নেই। এক জীবনে কেউ কখনো একসাথে সবকিছু পায়নি; কেউ পায় না। কিছু অপূর্ণতা মেনে নিয়েই একসাথে পথ চলতে হয়। তবে সব কিছুর উর্ধে মানসিক সুখ। যেখানে মানসিক সুখ আছে সেখানে বাহ্যিক অভাবকে পাত্তা না দিলেই আপনি সুখী।

সিলেট প্রতিদিন/এসডি.