Laldighi Hindu Protest: চট্টগ্রামের লালদিঘীতে হিন্দুদের বিশাল সমাবেশ, প্রতিবাদমুখর চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী সিলেট প্রতিদিন সিলেট প্রতিদিন প্রকাশিত: ১০:১১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৪ চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ গত পাঁচ আগস্টের ঘটনাবহুল দিনের পর দেশব্যাপী মন্দির ভাঙচুর, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিশাল সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী তাদের আট দফা দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা অভিমুখে গণমিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে নগরীর লালদিঘি মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশের প্রধান বক্তা ও বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র, পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ” সনাতনীদের দেশ থেকে উৎখাতের যে চক্রান্ত চলছে, তা কখনোই সফল হবে না। স্বাধীনতার ছয় দফার ইতিহাস স্মরণ করে আমরা আজ এই মাঠে সমবেত হয়েছি। সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর যত নিপীড়নই চালানো হোক না কেন, আমরা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম করব। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষে আমরা সবাই মিলে ঢাকা অভিমুখে গণমিছিলে যোগ দেব।” তিনি বলেন, “যদি কেউ চেষ্টা করে আমাদের এই দেশ থেকে উৎখাত করতে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে, তাহলে এই দেশ আফগানিস্তান, সিরিয়ার মতো হয়ে পড়বে। সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিয়ে কোনো গণতান্ত্রিক শক্তিই দেশে রাজনীতি করতে পারবে না।” দেশে সহনশীলতার অভাবের কারণে স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, “শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে, শুধু সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের লক্ষ্য করে নির্যাতন চলছে। আমরা আর নীরব থাকব না।” সংসদে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসন মেনে নেব না। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিরোধিতা করি না, কিন্তু বেছে বেছে মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।” সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, “সংবিধান সংশোধনের বিরোধী নই, কিন্তু দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে দেব না। জেএম সেন হলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জামিন হয়ে গেলেও, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।” তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন, “আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন। কিন্তু কিছু মহল আমাদের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছে।” গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ তপনানন্দ গিরি মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, কৈবল্যধামের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য এবং স্বামী গোপীনাথ মহারাজসহ অন্যান্য ধর্মীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা স্বাধীনতার পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন ও অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরেন। তারা বলেন, “বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্দশার চিত্র একই রয়ে গেছে। সরকারগুলো সনাতনীদের সমস্যাগুলো লুকাতে চায় এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতির ভান করে। গত ৫৩ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর যে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হয়।” আগস্ট মাস থেকে দেশব্যাপী হিন্দু মন্দির ভাঙচুর এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে: সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিনের ছুটি এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নগরীর জামালখান মোড়ে একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তারা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের দাবিতে আট দফা দাবি জানান। ৭ সেপ্টেম্বর খুলনায় কলেজছাত্র উৎসব মণ্ডলকে হত্যার চেষ্টার ঘটনার প্রতিবাদে আরও একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটি সমাবেশের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ক্ষোভ ও দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন। সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি সিলেট প্রতিদিনসত্যের খোঁজে প্রতিদিন Share this post: Facebook Twitter LinkedIn Pinterest WhatsApp আলোচিত সংবাদ বিষয়: