শ্রীমঙ্গলে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু,তদন্তে পুলিশ

প্রকাশিত: ১২:৫২ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২৫

বাপ্পি দেব (শ্রীমঙ্গল):

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইছবপুর গ্রামে ফাঁসিতে ঝুলে এক গৃহবধূর মৃত্যুকে ঘিরে ধীরে ধীরে বাড়ছে রহস্য ও সন্দেহ। নিহত গৃহবধূ জয়িতা দেব (২৫),স্বামী অর্জুন দাসের সঙ্গে বসবাস করতেন শ্বশুরবাড়িতে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাত সোয়া ৮টার দিকে নিজ ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 

নিহত জয়িতার একমাত্র মেয়ে সন্তান (৬) রয়েছে। মৃত্যুর সময় সে-ই প্রথম দৌঁড়ে নিচে গিয়ে খবর দেয় পরিবারের অন্য সদস্যদের। তখন নিচতলায় ছিলেন জয়িতার স্বামী,শাশুড়ি ও শ্বশুর। মেয়ের কথা শুনে উপরে গিয়ে তারা জয়িতাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

 

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,ঘটনার পেছনে রয়েছে পারিবারিক কলহ। ঘটনার দিন জয়িতা তার মেয়েকে স্কুল থেকে বাড়ি এনে দেখে,রান্না করা খাবার নেই। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হলে বিষয়টি শ্বশুর-শাশুড়ির মধ্যস্থতায় গড়ায়। একপর্যায়ে জয়িতাকে বলা হয়, তিনি যেন শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে ক্ষমা চান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘরের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন-এমনটাই দাবি করা হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

 

তবে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে ভিন্নতর বক্তব্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় কয়েকজনের দাবি,এই পরিবারে দীর্ঘদিন ধরেই দাম্পত্য কলহ চলছিল,যা মাঝে মাঝেই বড় ধরনের ঝগড়ায় রূপ নিত। তাই মৃত্যুটা ‘হত্যা নয় তো?’ এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকাবাসীর মাঝেও।

 

শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান,গৃহবধূ জয়িতার মরদেহ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর সদর মডেল থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ও ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠায়।

 

জয়িতার পিতা চন্দন কুমার দেব (৬৬), সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কায়স্থ গ্রামের বাসিন্দা,থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে মেয়ের মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ দাবি করে তদন্তের দাবি জানানো হয়।

 

ওসি আরও জানান,অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাজাহান মিয়া বলেন,“আমার জানামতে, বিষয়টি পারিবারিক কলহের জেরেই ঘটেছে। তবে তদন্তে যদি অন্য কিছু বের হয়,প্রশাসন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।”

 

জয়িতার বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,তারা মেয়ের মৃত্যুতে এখনই কাউকে দায়ী করছেন না। তবে ময়নাতদন্তে যদি মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো রহস্য উদঘাটিত হয়,তাহলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

 

ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের পূর্বাশা আবাসিক এলাকার শ্মশানে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জয়িতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

সিলেট প্রতিদিন/এসডি.