চুনারুঘাটে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ সিলেট প্রতিদিন সিলেট প্রতিদিন প্রকাশিত: ১১:০৪ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২৫ নিজস্ব প্রতিবেদক: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গণেশপুরে অবস্থিত আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি,আর্থিক অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ঘুরে ফিরছে। অথচ বিস্ময়করভাবে একাধিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও আজও স্বপদে বহাল রয়েছেন এই বিতর্কিত শিক্ষক। প্রশ্ন উঠছে; কেন এতসব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ? ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর শফিকুল ইসলামের প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম একসময় সাধারণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তি,পাইকপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহেদ আলীর ছত্রছায়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যত ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করতে থাকেন। ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে নিজের ইচ্ছামতো কমিটি গঠন করেন তিনি। নির্বাচনের নামে প্রহসন এবং দুর্নীতির অভিযোগে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালেও তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাধিক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ আর্থিক দুর্নীতির চিত্র; প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক লেনদেন থেকে শুরু করে নিয়োগ বাণিজ্য,শিক্ষার্থী উপবৃত্তি এবং ফরম পূরণ সংক্রান্ত প্রায় সব পর্যায়েই অনিয়মে জড়িত। এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ১৩ হাজার ১৩ টাকার আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু অনিয়ম: ১) সাদা কাগজে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে ২১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ। ২) অবৈধ কমিটি গঠন ও ফান্ডে টাকা না জমা দিয়ে ব্যক্তিগত জিম্মায় রাখা অর্থ। ৩) ভুয়া মামলার খরচ দেখিয়ে এক লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ। ৪) খণ্ডকালীন শিক্ষকদের ডাবল বেতন ও ভুয়া উপস্থিতি। ৫) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ আত্মসাৎসহ একাধিক অনিয়ম। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান,বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরাও সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সবচেয়ে বিতর্কিত অভিযোগ,প্রধান শিক্ষক নিজের ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর অনেক শিক্ষার্থী তাঁকে ‘দুলাভাই’ বলে সম্বোধন করা শুরু করে,যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য চরম বিব্রতকর এবং নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতার পরিবারও এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মরহুম মোজাফফর উদ্দিনের নাতি হালিমুর রশিদ সরাসরি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে,শফিকুল ইসলাম এই অভিযোগের প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হয়রানিমূলক মামলাও করেছেন বলে জানা যায়। তৎকালীন ইউএনও আয়েশা আক্তার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও বদলিজনিত কারণে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। বর্তমান ইউএনও রবিন মিয়া জানান, তিনি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়; সত্যতা প্রমাণিত একটি ঘটনার পরও বছরের পর বছর ধরে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সেই প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার জায়গাটি কোথায়? একজন প্রধান শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীদের আদর্শ না হয়ে, প্রতিষ্ঠানের বোঝা হয়ে দাঁড়ান। তখন শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। শফিকুল ইসলামের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষাঙ্গন দুর্নীতির অভয়ারণ্যতে পরিণত হবে। সিলেট প্রতিদিন/এসডি. সিলেট প্রতিদিনসত্যের খোঁজে প্রতিদিন Share this post: Facebook Twitter LinkedIn Pinterest WhatsApp আলোচিত সংবাদ বিষয়: ChunarughatCorruption newsHabiganjSylhet Pratidin