সত্যজিৎ দাস:
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে টমটম পার্কিংকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধুসহ ১৪ জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। রোববার (৩০ মার্চ) রাত ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ চলে টানা তিন ঘণ্টা। এতে ১৫টি টমটম,একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয় এবং পথচারীসহ ৩৯ জন আহত হন।
সংঘর্ষের সূত্রপাতঃ-
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শহরের হবিগঞ্জ সড়কের গদার বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধু কিছুদিন আগে ‘বিনা লাভের বাজার’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। কিন্তু সেই জায়গাটি আগে থেকেই টমটম চালকদের স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। রোববার রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে মহসিন মিয়া মধু সেখানে এসে টমটম চালকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য আনার মেম্বার টমটম চালকদের পক্ষ নিয়ে মধুকে প্রশ্ন করেন, "গরিব লোকদের সঙ্গে কেন অশোভন আচরণ করছেন?"
বাকবিতণ্ডা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মহসিন মিয়া মধুর অনুসারীরা ১৫টি টমটম ভাঙচুর করেন এবং একপর্যায়ে মধুর লোকজন ভানুগাছ সড়কে সাগর নামে এক পরিবহন শ্রমিক নেতার ব্যক্তিগত গাড়িও ভাঙচুর করে।
গ্রামবাসীর পাল্টা প্রতিক্রিয়াঃ-
এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। মুহূর্তেই চার থেকে পাঁচশ’ গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরের দিকে রওনা হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চৌমুহনা এলাকায় অবস্থান নিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। অন্যদিকে, মহসিন মিয়া মধুর অনুসারীরা স্টেশন রোড থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
একপর্যায়ে সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ নেয় এবং উভয় পক্ষ মুখোমুখি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এতে ৩৯ জন আহত হন, যাদের মধ্যে 'জয় চৌধুরী' নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হন এবং তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও গ্রেফতারঃ-
সংঘর্ষের সময় শহরে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে যান,ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে সরে যান। রাত ৩টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে মৌলভীবাজার জেলা থেকে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সেনাবাহিনী মহসিন মিয়া মধুর বাসায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
পরে মহসিন মিয়া মধু,তার ছেলে মুরাদ হোসেন সুমন,ভাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর আলকাছ মিয়াসহ ১৩ জনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাশাপাশি, সেনাবাহিনী পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনার মেম্বারের ছেলেকেও আটক করে।
প্রশাসনের বক্তব্যঃ-
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র এএসপি আনিসুর রহমান জানান,"সেনাবাহিনী সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১৪ জনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।"
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন,"রাতে সংঘর্ষের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে,পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছিল। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। বর্তমানে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।"
পরিস্থিতি এখনও থমথমেঃ-
বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। প্রশাসনের দাবি,পরিস্থিতি এখন শান্ত হলেও শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
সিলেট প্রতিদিন/এসডি.