সত্যজিৎ দাস:
বর্তমান সরকারের আমলে আইনের অধঃপতন ঘটেছে। এর মধ্যে প্রধান বেশ কিছু কারণ আছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্বলতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করে। এর ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে।
আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে উল্টো দুর্নীতির বাম্পার ফলনের ফলে,পুলিশের মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্নীতি পুনরায় মাথা ঝেড়ে উঠেছে এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি পক্ষপাতিত্ব আইনের অধঃপতনের একটি বড় কারণ। বিচার ব্যবস্থা যদি স্বাধীন না থাকে,তবে ন্যায় বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিলম্বতার কারণে; বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া,মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচার না হওয়ায় আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিচার এড়িয়ে চলা হচ্ছে,যা জনগণকে ফাঁকি দিতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বা অস্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়। এটি আইনের জন্য সমান আচরণ প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে।
বিগত সরকারের পলায়নের পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায়;আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যা বা গুমের ঘটনা আইনের প্রতি জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুন্ন করে।
অকার্যকর আইন ও খাতায় পত্রে নীতিমালা থাকলেও অনেক সময় আইনি কাঠামো অপর্যাপ্ত বা আধুনিক চাহিদা পূরণে অক্ষম থাকে,যা আইনের প্রয়োগে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই সব কারণে আইনের শাসন দুর্বল হতে থাকে এবং এর ফলস্বরূপ আইনের অধঃপতন ঘটে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব সাধারণত একটি নির্বাচনের পরবর্তী সময়কালে,যখন পূর্ণাঙ্গ সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী সরকার গঠন করা হয় না,তখন পালন করতে হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বগুলো হলো:
১) নির্বাচন আয়োজন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হল একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে জনগণ নতুন সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসন পরিচালনা করতে পারে।
২) আইনশৃঙ্খলা রক্ষা: নির্বাচনকালীন বা তার পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দায়িত্ব পালন করে, যাতে নির্বাচন ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে।
৩) মূল্যবান রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালানো: দেশের মৌলিক প্রশাসনিক কাজ, যেমন অর্থনীতি পরিচালনা, আইন প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সেবামূলক কাজগুলো অব্যাহত রাখা।
৪) মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা: জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, যাতে দেশের জনগণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিরাপদভাবে সম্পন্ন করতে পারে।
৫) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব মুক্ত থাকতে হবে, যাতে তা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
এভাবে,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা এবং দেশের উন্নয়ন বা প্রশাসনিক কাজে কোনো বড় ধরনের ব্যাঘাত না ঘটানো। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা হচ্ছে না।
সিলেট প্রতিদিন/এসডি.