‘বিচারহীনতা’: রাষ্ট্র কি ব্যর্থতার পথে ? সিলেট প্রতিদিন সিলেট প্রতিদিন প্রকাশিত: ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২৫ ওমায়ের আহমেদ শাওন: একটি গণতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো আইন ও ন্যায়বিচার। কিন্তু যখন অপরাধীরা শাস্তি পায় না, তখন তা কেবল অপরাধপ্রবণতাকে উৎসাহিত করে না,বরং গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে নৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। আজকের বাংলাদেশেও বিচারহীনতার এক ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি,যেখানে অপরাধের শাস্তির বদলে অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। বিচারহীন রাষ্ট্র কি আমাদের ভবিষ্যৎ ? বিপ্লবের পরে মানুষ তার অধিকারের স্বীকৃতি চায়। তারা একটি নিরাপদ,মানবিক ও সুবিচারভিত্তিক সমাজ প্রত্যাশা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে,গণঅভ্যুত্থানের পরও বহু অপরাধের বিচার হয়নি। বিচারহীনতা কেবল অপরাধীদের সাহস জোগায় না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি করে। একটি আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন যথেষ্ট নয়;আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করাও সমানভাবে জরুরি। বিচারহীনতা চলতে থাকলে আইন ও শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হবে,যা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। বিচারের অভাবে অপরাধের বিস্তারঃ- বর্তমানে হত্যা, ধর্ষণ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মব জাস্টিসসহ বিভিন্ন অপরাধ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। অপরাধীরা জানে যে, প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকরে তারা সহজেই রেহাই পেয়ে যাবে। এর ফলে দেশে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে,সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা না গেলে এই প্রবণতা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়া,দোষীদের বিচারের আওতায় না আনা এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় অযথা বিলম্ব করা— এগুলোই রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে তোলে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তাঃ- দেশে চলমান বিচারহীনতা রোধ করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন। যেখানে:- ১) সংঘবদ্ধ অপরাধের দ্রুত বিচার হবে। ২) দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ৩) যদি প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকে,তাহলে দ্বিগুণ শাস্তির বিধান রাখা হবে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে অপরাধীরা আইনের ভয় পাবে এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। রাষ্ট্রের নৈতিক দায়:- সরকার যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়,তবে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে,যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। বিচারের অভাব জনগণকে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য করবে,যা রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যারা অপরাধীদের রক্ষা করতে চায়,যারা বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে,তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। পাশাপাশি,আইন সংস্কার করে অপরাধীদের আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের করণীয়ঃ- বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা। যদি সরকার এই বিষয়ে গড়িমসি করে,তবে তা হবে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। সময় এসেছে,রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করুক, কারণ ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা নিজেই এক ধরনের অপরাধ। লেখক: ওমায়ের আহমেদ শাওন (গণমাধ্যম বিশ্লেষক) গাজীপুর,মোবাইল: ০১৭৩৮৫১৯৩০৮। সিলেট প্রতিদিন/এসডি সিলেট প্রতিদিনসত্যের খোঁজে প্রতিদিন Share this post: Facebook Twitter LinkedIn Pinterest WhatsApp মুক্ত কলাম বিষয়: BangladeshNews updateOpen ColumnSpecialSylhet Pratidin